68Th pOsT : দীপাংশু আচার্য


শীতের রূপকথা

আসলে একটা পাল্টে যাওয়া মাত্র। রোদ বা ঘটনা লেগে, হাঁটতে হাঁটতে, প্রেমে বা প্লাবনে পাল্টে যাওয়া। শুধু পাল্টে পাল্টে যাওয়া। স্বরক্ষেপকের অভিশপ্ত সন্তান। বসে আছে ভগবানের নীচে। হাতের মুঠোয় তার রক্ষাকবচের মতো শেষ কিছু অক্ষর। যাতে আমার একা না লাগে, সময় অসময় উল্টে পাল্টে দেখতে পারি নিজেকে, ফেলে আসা গতিপথ, আপোষের অভিমুখ, বিচ্ছেদের তুলো, তাজ্যপুত্রের মতো আঁশ। আর তো কিছুই নেইতোমাকেই খুঁজি। আরে ভাই, আর কত নকল ফুলের পাপড়ি সাঁটাবো খাতায়, নিরালা চুমকি আর গোল গোল ছোটছোট কাচের  আয়না দিয়ে সাজানো চাঁদমালার স্মৃতি। মাঝে মাঝে ঠাণ্ডায় মা হয়ে যাই। তার স্বামীর কিনে দেওয়া কবেকার সৌখিন বাদামী চাদর জড়িয়ে রাস্তায় বেরই বাবার বলা গল্পের স্বেচ্ছাসেবী গোয়েন্দার মতো, অথচ চুলদাড়ি দেখলে মনে হবে খ্যাপা পোস্টম্যান অবিকল। গত তিন দিন সূর্যোদয় সূর্যাস্ত কিছুই দ্যাখেনি সে। পাচার করতে ব্যস্ত ছিল-এর ভাষা তাকে-তার ভাষা ওকে। ভাবে এমন একটা দিনের কথা, ঘুম থেকে আর ফিরতে হবে না যেদিন কাউকেই। অ্যাতোকিছু আটকে আছে মাথার ঝাঁজরিতে একাধিক ভাবনা জুড়ে গিয়ে আকারে বেড়ে গ্যাছে ছিদ্রের তুলনায়বেরোতেই চায় না, চাইলেও পারে না। আমি যা যা জানি, তা-ই তা-ই যদি জানত সবাই, তাহলে আর কোনও অসুবিধা থাকত না। মাকে আর বিশেষ কিছু মায়াবিকে আর মনের মত কয়েকটি পুরুষকে আচমকা হঠাৎ চমকে দিতে চাই ঝলমলে বায়বীয় সব উপহারে ভরিয়ে দিয়ে পৃথিবী। এভাবেই লম্বা হতে থাকি আমি। হতে থাকি নিজেরই সমান্তরাল। এভাবে পর্দাফাঁই করি আমি বিস্মৃতির ভারী আড়াল, মনে পড়ে আদিম ডিম্বাকার দায়িত্বগুলি, খসখসে, দুধে আলতা রঙের সবচেয়ে পাতলা উপস্থিতি। পাশের ঘরে এসে জড়ো হয় সমস্ত জন্মের মায়েরা, বিনিময় করে উলকাঁটা, লাল ওষুধ, কড়াইশুটি ও হনুমান চালিশা, করে গুজগুজ ফুসফুস, নির্ধারণ হয়ে রাখে পরবর্তী মায়েদের নাম, ধূসর অবস্থান, আক্ষরিক যন্ত্রণা। আমি টানটান করি আর প্রস্তুত রাখি নিজেকে। ক্লান্তির প্রকৃত ধারণা, বিশ্রামের সরলতম আদিম কাঠামো কবে চলে গ্যাছে মানুষের আত্মাকে ফেলে। বন্ধু, যদি সনাক্ত করেও থাকে তোমার অসহায় ইন্দ্রিয়, আমি অস্বীকার করি পুনরাবৃত্তি। চাইলেও কারও পক্ষে নতুন ছাড়া কিছু লেখা সম্ভব নয়। প্রত্যেকবার বসতে হয় তাকে আলাদা আলাদা সমাধির ওপর। সে যখন হাত ধরে তোমার, তুমি হাঁটতে থাকো নিশ্চিন্তে, জন্মান্ধের মতো, যেন ঘুটঘুটে মহাকাব্যিক টানেলের ঝোলানো সারি সারি জ্বলন্ত চিরাগের নীচ দিয়ে থোকা থোকা শ্লোক বয়ে নিয়ে যাচ্ছে নীল নোনতা রক্তের নর্দমা।