73rD pOsT : সুপ্রভাত রায়


ড্রিম সিকোয়েন্স

দেখলাম আমি অনেকটা পিছিয়ে পড়েছি। রাস্তা ভেবে এগিয়ে যাওয়াটাকে আঁকড়ে ধরতে গিয়ে চারপাশ এতক্ষন ফেড আউট হয়েছিল। আচমকা ফ্ল্যাশের মতো একটা বিদ্যুতের চমক স্পষ্ট করে দিলো অবস্থান। বিদ্যু যেভাবে আমাকে চমকালো সেই ভয়ের আলো যেন লেগে গেলো সবকটা গাছে। একটা জঙ্গল। অথচ আমরা তো পিচ রাস্তা দিয়ে হাঁটছিলাম--প্রত্যেকটা গাছ ধূসর রঙের আর প্রত্যেকটা গাছের শরীরে পেরেক দিয়ে প্ল্যাকার্ড গেঁথে দেওয়া। দিজ ট্রি ইজ স্পন্সরড বাই নোকিয়া, দিজ ট্রি ইজ স্পন্সরড বাই ভোডাফোন অমুক অমুক তমুক তমুক--সঙ্গে সঙ্গে পকেটে হাত দিলাম--না, আমার ফোনটা পকেটে নেই, নিয়ে বেরোতে ভুলে গেছি। সিগারেটের প্যাকেট, দেশলাই আর পার্সটা রয়েছে। বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় যেমন অন্ধের স্পর্শের মতো ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখে নি  সব স্থানে স্থানে আছে কিনা। অথচ ফোনটা নিয়ে বেরোতেই ভুলে গেলাম? : বাবা, আমি কি করে ওদের খুঁজবো? সেইসব গাছেদের দিকে চোখ গেল, টিভিতে দেখা থোকাথোকা আঙ্গুর গাছে যেভাবে ঝোলে সেভাবে থোকাথোকা হ্যান্ডসেট ঝুলছে। দৌড়ে গেলাম একটা গাছের দিকে, অথচ আমি যত স্পিডে দৌড়চ্ছি তত তাড়াতাড়ি সেখানে পৌছতে পারছি না। দূরত্বরা যেন সরে সরে যাচ্ছে আমার থেকে। সমস্ত ফোনগুলো নাগালের বাইরে থেকে আমাকে খেলাচ্ছে। আমি ঘামতে শুরু করেছি এবার; আর ঠিক তক্ষুনি আবার একবার বিদ্যু  চমকালো। যে আলোয় আমি দেখতে পেলাম আমি যেখানে দাড়িয়ে আছি তার ডানদিকে সরাসরি কাঁচের দেওয়াল দেওয়া টেলিফোন বুথ। গাড় লাল কালিতে তাদের গায়ে লেখা STD ISD PCO. এগিয়ে গেলাম বুথ্গুলোর দিকে। ঐটুকু দূরত্ব পেরোতেই একটা শশ্মান শশ্মান আবহাওয়া ঘিরে ধরলো আমায়। সেখানে লাইন করে রিসিভারগুলো মৃতদেহের মত সাদা চাদর দিয়ে ঢাকা। লাল রঙের লেখা গুলো গলে গলে গড়িয়ে গড়িয়ে নামছে  কাঁচের গা বেয়ে, ওটা কি রং? নাকি রক্ত? এক অদ্ভূত হাওয়া আমার মধ্যে ক্লান্তি জাগিয়ে তুলছে ক্রমশ, আর সেই হাওয়ায় মড়া পোড়ার গন্ধ। একবার দৌড়  শুরু করে দিতে পারলেই পালিয়ে যেতে পারব সেফ জোনে। যেই পালাবো বলে পা বাড়িয়েছি অমনি অজস্র শিকল আমার পায়ে গায়ে জড়িয়ে গেল। তারপর লক্ষ্য করে দেখলাম প্রতিটা শিকল সংখ্যা দিয়ে তৈরী--মোবাইল নম্বর, যে নম্বরগুলো আমার খুব চেনা কিন্তু কিছুতেই মনে পড়ছে না কোনটা কার। ডিজিট দিয়ে তৈরী শিকল গুলো আরো আরো জাপটে জড়িয়ে ধরতে থাকলো আমায়। এবার দম বন্ধ হয়ে আসছে, শ্বাস কষ্ট--শ্বাস কষ্ট। 
ঘুম ভেঙ্গে গেল। জানলা দিয়ে একটা সত্যি ভোরের হাওয়া সারা গায়ে মলমের মত ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাচ্ছে। ঢকঢক করে জল খেলাম অনেকটা। একটা সিগারেট ধরালাম। দেখলাম আমার মোবাইল ফোনটা বালিশের পাশে ঘুমিয়ে রয়েছে নিশ্চিন্তে।